শাড়ি, একটি ঐতিহ্যবাহী পোশাক যা শুধু আমাদের সংস্কৃতির নয়, পুরো উপমহাদেশের নারীদের পরিচয়ের অংশ। যদিও আজকাল আন্তর্জাতিক ফ্যাশন দুনিয়ায় শাড়ি বলতে আধুনিক ডিজাইনকেই বেশি বোঝানো হয়, তবুও প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব শাড়ির ঐতিহ্য আজও প্রাণবন্ত। চলুন দেখি উপমহাদেশের কিছু পরিচিত ও জনপ্রিয় শাড়ি এবং তাদের বৈশিষ্ট্য।বাংলাদেশী শাড়ি:
বাংলাদেশের শাড়ি মূলত বাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখে। জামদানি, ঢাকাই বেনারসি, রাজশাহী রেশমী শাড়ি, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, কাতান শাড়ি, পাবনার শাড়ি, সুতি শাড়ি, মণিপুরী শাড়ি—এসব শাড়ি শুধু সৌন্দর্যই নয়, সূক্ষ্ম কারিগরি দক্ষতাও প্রদর্শন করে।
ভারতীয় শাড়ি:
উত্তরাঞ্চলীয় শাড়ি যেমন বাঁধনি (গুজরাট ও রাজস্থান), চিকন (লক্ষ্ণৌ), কটা দরিয়া (রাজস্থান), বেনারসি (বারাণসী), তাঁত, জামদানি এবং শালু, ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। পূর্বাঞ্চলীয় শাড়ি যেমন কাঁথা, বালুচরী, মুর্শিদাবাদী সিল্ক, শান্তিপুরী তাঁত—সবই পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যকে তুলে ধরে।
মধ্যাঞ্চলীয় শাড়িতে চান্দেরি (মধ্য প্রদেশ), পাইথানি ও লুগাদে (মহারাষ্ট্র), ইক্কাত, বোমকাই, সম্বলপুরি (উড়িষ্যা) রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের শাড়ি যেমন পচাম্পালি, বেঙ্কটগিরি, উপ্পাদা জামদানি, গাদোয়াল, মঙ্গলগিরি (অন্ধ্র প্রদেশ ও তেলেঙ্গনা), বলরামপূরম (কেরল), কাঞ্চিপূরম, চেত্তিনাদ, আরানি রেশম (তামিলনাড়ু), মাইসোর রেশম (কর্ণাটক)—এসব শাড়ির নিজস্ব কারুকার্য ও রঙের বৈচিত্র্য আছে।
নেপালী শাড়ি:
নেপালে নারীরা বিভিন্নভাবে শাড়ি পরেন। এর মধ্যে হাকু পাতাসি বিশেষভাবে পরিচিত। এটি লাল পেড়ে কালো শাড়ি, যা নেপালের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে।
পাকিস্তানী শাড়ি:
পাকিস্তানে সালোয়ার-কামিজ দৈনন্দিন ব্যবহারে আধিপত্য বিস্তার করেছে। তবে বিশেষ অনুষ্ঠান বা উদযাপনে শাড়ি এখনও গুরুত্বপূর্ণ। মোহাজির সম্প্রদায়ের ভারতীয় অভিবাসীরা শাড়ির ঐতিহ্য বজায় রেখেছেন, যা মূলত করাচীতে দেখা যায়।
শ্রীলঙ্কার শাড়ি:
শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় ধরণের শাড়ি বেশি প্রচলিত। সাধারণভাবে এটি কানাড়ীয় ধরন বা সিংহলিজ ভাষায় ‘ওসারিয়া’ নামে পরিচিত। ক্যান্ডির পাহাড়ী এলাকায় ক্যান্ডীয় ধরন চালু রয়েছে।
শাড়ি কেবল একটি পোশাক নয়, এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও কারুশিল্পের মিশ্রণ। প্রতিটি অঞ্চলের শাড়ি তার স্থানীয় ঐতিহ্য, কারিগরি দক্ষতা এবং সৌন্দর্যের পরিচয় বহন করে। শাড়ি পরিধানের মাধ্যমে আমরা শুধু নিজেদের সাজাই না, বরং এই অসাধারণ ঐতিহ্যকেও জীবন্ত রাখি।